বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

বিজ্ঞানের চোখে স্বপ্ন


স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, কেননা অধিকাংশ স্বপ্নই হয় সুখের। তবে ঘুমের ঘোরে মানুষ দুঃস্বপ্নও দেখে থাকে। ভয়ে কারো কারো প্রান শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। আবার, অনেক সময় স্বপ্ন দেখে মানুষ আশায় বুক বাধে, নতুন করে বেচে থাকার শক্তি পায়।


সপ্ন কি?
স্বপ্ন মানুষের একটি কাল্পনিক অবস্থা যাতে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। স্বপ্ন কাল্পনিক হলেও স্বপ্ন দেখার সময় তা আসল মনে হয়। অধিকাংশ সময়ই স্বপ্নদ্রষ্টা নিজে সেই ঘটনায় অংশগ্রহন করছে বলে মনে করতে থাকে। আবার অনেক সময় পুরনো অভিজ্ঞতার টুকরো টুকরো স্মৃতি কল্পনায় বিভিন্নভাবে মিশে বা পরিবর্তিত হয়ে সম্ভব অসম্ভব সব ঘটনার রুপ নেয়। 


স্বপ্ন হল ধারাবাহিকভাবে কতগুলো ছবি ও আবেগের সমষ্টি যা ঘুমের সময় আমাদের মনের মধ্যে আসে। এগুলো আমাদের কল্পনা হতে পারে বা আমাদের অবচেতন মনের কথাও হতে পারে। 

স্বপ্নের কয়েকটি তত্ত্বঃ
তার আগে আমাদের জানতে হবে আরইএম কি?
স্বপ্ন দেখার সময় আমাদের চোখের পাতা কেঁপে ওঠে। এটি REM বা Rapid Eye Movement নামে পরিচিত। 

স্বপ্নের একটিভেশন-সিন্থেসিস তত্ত্ব অনুসারে, স্বপ্নের আসলে কোন অর্থই নেই। ঘুমের সময় মস্তিস্কে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে আমাদের স্মৃতি থেকে বিভিন্ন চিন্তা ও আবেগ উঠে আসে যাদের পরস্পরের মধ্যে কোন সম্পর্কই থাকে না। একমাত্র ঘুম থেকে উঠার পর আমরা এই খাপছাড়া দৃশ্য, চিন্তা এবং আবেগগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করি। তখন তৈরি হয় এক বা একাধিক গল্প। 

স্বপ্ন সম্পর্কিত ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুসারে, স্বপ্ন হল মানুষের অবদমিত ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা লাভ। স্বপ্নে দেখা ঘটনার দুটি অর্থ রয়েছে। একটি বাহ্যিক অর্থ এবং অপরটি সুপ্ত বা নিগুঢ় অর্থ। প্রথম অর্থে স্বপ্ন চিন্তা, ছবি ও আনুষঙ্গিক বিষয়ের হুবহু চিত্র। আর দ্বিতীয় অর্থটি মনোবিশ্লেষণের মাধ্যমে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া অতিক্রম করে আসে। 

স্বপ্নবিজ্ঞানীদের মতে, নিদ্রার যে পর্যায়ে কেবল অক্ষিগোলক দ্রুত নড়াচড়া করে কিন্তু বাকি শরীর শিথিল (সাময়িকভাবে পক্ষাতগ্রস্থ) হয়ে যায় সেই আরইএম দশায় স্বপ্ন তৈরি হয়। 

বিজ্ঞানের চোখে স্বপ্নঃ
এই গবেষণাটি চালানো হয় পঁয়ষট্টিজন স্বেচ্ছাসেবকের উপর। মানুষের মস্তিষ্ক অনেকগুলো নিউরন কোষের সমন্বয়ে গঠিত। নিউরন কোষগুলো বিদ্যুৎ-তরঙ্গের মাধ্যমে সঙ্কেত প্রেরণ করে থাকে। জেগে থাকা, আধঘুম, আধজাগরন, উত্তেজিত ইত্যাদি অবস্থায় মস্তিস্কের বিভিন্ন রকমফের দেখা যায়। 

অনেক আগে থেকেই জানা ছিল মানুষ ঘুমের REM দশায় স্বপ্ন দেখে। REM দশায় কাউকে ঘুম থেকে তুললে সে বলতে পারে কি স্বপ্ন দেখেছিল, কতবার দেখেছিল ইত্যাদি। ঘুমের বিভিন্ন পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের মস্তিস্কের বিদ্যুৎ তরঙ্গ মাপা হয়। আর ঘুমের বিভিন্ন সময়ে সেচ্ছাসেবকদের জাগিয়ে তাদের স্বপ্নের বিভিন্ন রেকর্ড করা হয়। 


কেন REM ঘুমের পরই মানুষ স্বপ্নের কথা মনে করতে পারে এ প্রশ্নের উত্তর দেয় উপরের গবেষণাটি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে REM ঘুমের পর যাদের মস্তিষ্কের "ফ্রন্টাল লোব" নামক অংশে স্বল্প কম্পাঙ্কের থেটা তরঙ্গ দেখা যায় তারাই দেখা যায় স্বপ্ন বেশি মনে করতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন আমরা অতীতে ঘটে জাওয়া ঘটনা স্মরন করি তখনও মস্তিষ্কের এই অংশে স্বল্প কম্পাঙ্কের থেটা তরঙ্গ দেখা যায়। 

স্বপ্ন সম্পর্কে আরও কিছু তথ্যঃ 
  • আসলে প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখে। যারা স্বপ্ন মনে রাখতে পারেনা তাদের ধারনা তারা স্বপ্ন দেখে না। 
  • ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার ৫ মিনিট পর স্বপ্নের অর্ধেক স্মৃতি লোপ পায় এবং দশ মিনিট পর স্বপ্নের ৯০ ভাগ লোপ পায়। স্বপ্ন মনে রাখতে চাইলে ডায়েরিতে স্বপ্ন লিখে রাখা যেতে পারে।
  • সাধারনত আট ঘণ্টার ঘুমের মধ্যে মানুষ ৩-৫ বার স্বপ্ন দেখে।
  • REM ঘুম একনাগারে কিছুদিন না হলে মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। 
  • মানুষ ছাড়া অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরাও (যেমন, বিড়াল) যে স্বপ্ন দেখে তারও পরোক্ষ প্রমাণ পাওয়া গেছে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, স্বপ্নের কোন অর্থ থাকুক বা না থাকুক, জীবনধারণের জন্য স্বপ্নের একটি বিশেষ তাৎপর্য আছে।
  • স্বপ্ন চলতে থাকা অবস্থায় (REM দশায়) যদি আপনি জেগে যান তবে আপনি না জাগলে স্বপ্ন যতটুকু মনে রাখতে পারতেন তা অপেক্ষা বেশি মনে রাখতে পারবেন।
  • ঘুমন্ত কারো কাছে মৃদু সঙ্গীত বাজালে, মুখমণ্ডলে উজ্জ্বল আলো ফেললে অথবা মুখে পানি ছিটালে স্বপ্নের মধ্যে বাইরের এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্ভাবনা প্রবল। 
  • অন্ধ লোকও স্বপ্ন দেখে। অন্ধ লোকটি স্বপ্নে ছবি দেখতে পারে কিনা তা নির্ভর করে সে জন্মকালীন অন্ধ বা জন্মের পর দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কিনা তার উপর। 
  • বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রায় ৮০ ভাগ স্বপ্নই সাধারনত নেতিবাচক ও পীড়াদায়ক হয়ে থাকে। 
  • মানুষের নেতিবাচক আবেগগুলো স্বপ্নের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত হয়ে রাগ ও দুশ্চিন্তাকে অবদমিত করে রাখতে সাহায্য করে। 
তথ্যসূত্রঃ 
পোস্ট ভাল লাগলে দয়া করে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করুন। বিকন ব্লগের কন্টেন্টগুলো নিয়মিত পেতে ব্লগটির ফেসবুক ফ্যানপেজে লাইক দিন।
ধন্যবাদ। 

লেখক সম্পর্কে

  • আমি বিকন, মোঃ নেওয়াজ মোরশেদ (বিকন); বিকন ব্লগ এর একমাত্র অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, উদ্যোক্তা ও ডিজাইনার। ইন্টারনেট জগত আর কম্পিউটারের প্রতি অপরিসীম টান অনেকটা এডিক্টেড হিসেবেই ডিফাইন করেছে আমাকে। অনেক কিছু জানতে চাই, যা জানি শেয়ার করতে চাই। আমার সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করুন।

    • Blogger Comments
    • Facebook Comments

    0 মন্তব্য(গুলি):

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Item Reviewed: বিজ্ঞানের চোখে স্বপ্ন Rating: 5 Reviewed By: Unknown
    Scroll to Top